বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য এখন অর্থনীতিতে। ৫০ বছরে বাংলাদেশ নামের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হয়ে উঠেছে চমকেভরা জাদুর বাক্স। সাহায্যনির্ভর বাংলাদেশ এখন বাণিজ্যনির্ভর দেশে পরিণত। তবে যাত্রাপথটা সহজ ছিল না। বড় বড় ঝুঁকি নিয়ে অভিনব পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আমাদের সাহসী উদ্যোক্তারা। এই সাফল্যের পেছনে আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ যেমন ছিলেন, আছেন নীতিনির্ধারকেরাও। মূলত অর্থনীতির এসব অগ্রনায়ক, পথরচয়িতা ও স্বপ্নদ্রষ্টারাই ৫০ বছরে বিশ্বে বাংলাদেশকে বসিয়েছেন মর্যাদার আসনে।
আমরা বেছে নিয়েছি সেই নায়কদের মধ্যে ৫০ জনকে। আমাদের কাছে তাঁরাই অর্থনীতির ‘গেম চেঞ্জার’। স্বাধীনতার পরে এবং আশির দশকে বলা হতো দেশের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিটি হচ্ছেন জহুরুল ইসলাম। দীর্ঘদিন ধরেই এটি প্রচলিত ছিল। চর্চা ছিল তাঁর জীবনের নানা কাহিনি নিয়েও। তিনি যে কেবল দরিদ্র অবস্থা থেকে উঠে এসেছিলেন তা–ই নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনেক কিছুই তাঁর হাত দিয়েই শুরু। বিশেষ করে দেশের নির্মাণ ও আবাসন খাতে পথ রচয়িতা জহুরুল ইসলাম। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় তিনি দেশের অন্যতম শিল্পপতি হয়েছিলেন।
রুশ অর্থনীতিবিদ এস এস বারানভের গবেষণা গ্রন্থ ‘পূর্ব বাংলা অর্থনৈতিক উন্নয়নের বৈশিষ্ট্য (১৯৪৭-১৯৭১) ’-এ ‘পাকিস্তানের বৃহৎ বাঙালি বুর্জোয়াদের প্রধান গ্রুপসমূহ’ শিরোনামে একটি তালিকা দিয়েছেন। তালিকার দ্বিতীয় নামটিই ছিল ইসলাম গ্রুপের। এই গ্রুপের অধীনে ছিল ১৪টি কোম্পানি আর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ছয় কোটি টাকার বেশি।
আবার ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় গবেষণা সংস্থা থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের কয়েকজন শিল্পোদ্যোগীর জীবনকাহিনী’ শিরোনামের বইতে বলা আছে, ‘বাংলাদেশের যে সকল ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোগীর জীবনী আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করিয়াছি, তাঁহাদের তুলনায় জহুরুল ইসলাম বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ।’
জহুরুল ইসলামের জন্ম কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানার ভাগলপুর গ্রামে, ১৯২৯ সালের ১ আগস্ট। তাঁর বাবা আফতাব উদ্দিন আহমেদ ছিলেন ময়মনসিংহ ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের একজন ছোট ঠিকাদার। তাঁর আয় খুব বেশি ছিল না। জহুরুল ইসলাম ছিলেন দ্বিতীয় পুত্র। কলকাতায় চাচার কাছে থেকেই তিনি লেখাপড়া করতেন। চাচার ছিল বদলির চাকরি, তাই বারবার স্কুল পরিবর্তন করতে হয়েছিল। ১৯৪৫ সালে তিনি কলকাতার রিপন হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। বলতে গেলে তাঁর শিক্ষাজীবন এখানেই শেষ। পরে তিনি দুইবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেও পাস করতে পারেননি।